Hotline: 10617, 09612-310617

DAM's President Kazi Rafiqul Alam received the 'Who's Who Bangladesh' 2022 Award

দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় ‘হুজ হু বাংলাদেশ’ ২০২২ অ্যাওয়ার্ড পেলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দেশের আরও ১১ গুণী ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে একই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

 

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত গুণিজনদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।

 

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ড. মোহাম্মদ ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাস প্রতিনিধি, হুজ হু বাংলাদেশের সম্পাদক লুৎফুন নাহার তাপসী, প্রধান নির্বাহী নাজিনুর রহিমসহ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিগত দিনে এই অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে চ্যানেল আইয়ের পরিচালক শাইখ সিরাজসহ অনেকে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

 

আয়োজকরা জানান, ‘হুজ হু’ ১৮৪৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যসহ সারা বিশ্বের অনুসরণীয় গুণিজনদের পদক প্রদান ও সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ করে আসছে। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৩৩ হাজার গুণিজনের সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ করেছে হুজ হু। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির পথচলা শুরু ২০১৫ সালে। প্রতি ২ বছর অন্তর ‘হুজ হু বাংলাদেশ’ এই অ্যাওয়ার্ড দিয়ে আসছে। এবার চতুর্থবারের মতো অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ‘হুজ হু বাংলাদেশ’ ২০২২ অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা হলেন- শিক্ষায় অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, শিল্প ও সংস্কৃতিতে প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা, সাংবাদিকতায় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, শিল্প ও সাহিত্যে ড. অগাস্টিন ক্রুজ, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সমাজসেবক ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম, ক্রীড়ায় শুটার সাবরিনা সুলতানা, কৃষিতে লায়ন কহিনুর কামাল, শিল্প-বাণিজ্যে এস এস গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মু. আবু সাদেক, উদ্যোক্তায় স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানির ম্যানেজিং পার্টনার সুলাইমান এস আযানী, নারী উদ্যোক্তায় ‘উই’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা, পেশাজীবী বিভাগে বিএসএমএমইউ উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, আজীবন সম্মাননা শিল্পী রফিকুন নবী এবং প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

 

কাজী রফিকুল আলমের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা : ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের (ডাম) সভাপতি কাজী রফিকুল আলম যুক্তরাজ্য থেকে শিক্ষায় বিশেষত্বসহ এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করেন। তিনি ৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পরিচালক (পরিকল্পনা) পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে কোনো বেতন বা ভাতা ছাড়াই দুস্থ মানবতার সেবায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনে (ডাম) পূর্ণকালীন হিসেবে যোগদান করেন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে দুস্থ ও অতি দরিদ্রদের লক্ষ্য করে তিনি ডামের মানবিক কর্মকাণ্ডকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেন। তার গতিশীল নেতৃত্বে, ডাম এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী এনজিও-ইউনেস্কো লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়।

 

তিনি বর্তমানে Campaign for Popular Education (CAMPE)-এর চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশ রিডিং অ্যাসোসিয়েশন (বিআরএ)-এর সভাপতি। কাজী রফিকুল আলম টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এডুকেশন ফর অল (ইএফএ), ইউনেস্কো, প্যারিসের সদস্য ছিলেন। তিনি ইউনেস্কো রিসোর্স পার্সন হিসেবে এশিয়া-প্যাসিফিক কালচারাল সেন্টার ফর ইউনেস্কো-জাপান এবং আইসেসকোসহ সবার জন্য শিক্ষা প্রচারে বিশ্বব্যাপী ৮০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক কর্মশালা পরিচালনা করেছেন। কাজী রফিকুল আলম বেসরকারি খাতে উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন এবং আহ্ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আউস্ট) প্রতিষ্ঠা করেন। এর বাইরে তিনি বেশ কয়েকটি মূলধারার স্কুল, কলেজ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। রাজধানীর উত্তরায় বেসরকারি খাতে প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ৫০০ শয্যার ক্যান্সার হাসপাতাল নো-লস-নো-প্রফিট ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে দরিদ্র রোগীরা তুলনামূলক স্বল্প খরচে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকে। তাঁর উদ্ভাবিত মাল্টি-গ্রেড টিচিং-লার্নিং (এমজিটিএল), প্রারম্ভিক শৈশব উন্নয়ন (ইসিডি), ইউনেস্কোর কমিউনিটি লার্নিং সেন্টার (সিএলসি), যা সারাদেশে গণকেন্দ্র নামে পরিচিত, সারাদেশে ২০০টি কমিউনিটি রিসোর্স সেন্টার (সিআরসি) প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এই ধরনের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় তার অনবদ্য অবদানের জন্য তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন। গত সাড়ে তিন দশকে কাজী রফিকুল আলমের নেতৃত্বে দুই কোটিরও বেশি সুবিধাবঞ্চিত দুস্থ মানুষের সেবা করা হয়েছে। তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, জীবিকা, মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারসহ বিভিন্ন সেবা পেয়েছেন।

 

কাজী রফিকুল আলমের নেতৃত্বে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ইউনেস্কা কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার, আইসেস্কো সাক্ষরতা পুরস্কার, এজিফান্ড ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ, গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক অ্যাওয়ার্ডসহ ২০টির অধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে।

 

জাতীয় পর্যায়েও কাজী রফিকুল আলমের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীনতা পুরস্কারসহ ১৬টি পুরস্কার লাভ করে।